ভ্রমণ গল্প:
নিশীথের আকাশটা আজ বেশ মেঘলা। পূবের দিকে কিছু দূরে তেজস্বী আলো ফুটেছে, কিন্তু দিগন্তের আশেপাশে ভিজে থাকা মেঘগুলো ঠিকই ঢেকে রেখেছে। বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে থাকেন মশিউর রহমান, এলাকার একজন প্রবীণ ও সম্মানিত ব্যক্তি। আজ তাঁর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। তার মেয়ে, সাফিয়া, আজ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন।
মশিউর রহমান অনেক বছর ধরে একটি ছোট গ্রামে বাস করছেন। তার জীবনের পুরোটা সময়ই তিনি এই গ্রামে কাটিয়েছেন, যেখানে গাছপালা, নদী এবং পাখিদের গানই তার দিনের আনন্দ ছিল। কিন্তু আজ, তাঁর মেয়ের বিদেশ যাত্রা তাকে একদিকে গর্বিত করছে, অন্যদিকে কিছুটা উদ্বিগ্নও।
সাফিয়া তার বাবার একমাত্র মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই সে মেধাবী ও উদ্যমী। তার এই অর্জনের পেছনে অনেক কষ্ট এবং অধ্যবসায় রয়েছে। তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল যে, সাফিয়া যেন ভালো কিছু করতে পারে, আর আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।
বাবা, আমি ঠিক সময়েই পৌঁছে যাব, এই সাফিয়া বলল। তার চোখে কিছুটা উৎকণ্ঠা এবং উত্তেজনা। মশিউর রহমান মৃদু হাসি দিয়ে উত্তর দিলেন, আমার মেয়েকে সবসময় সম্মান দিয়ে রাখবে, জানো। বিদেশে যাওয়ার সময় কখনো কষ্ট করতে হবে না, শুধু মনে রেখো—তুমি কোথায় যাচ্ছো না কেন, তুমি আমাদেরই অংশ।
বিকেলে, সাফিয়ার বিমান ওঠার সময় ঘনিয়ে আসছে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, এবং এলাকার কিছু মানুষ মশিউর রহমানের বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে। সবাই সাফিয়াকে বিদায় জানাতে এসেছে। মশিউর রহমান তাঁর পরিচিত সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। তিনি জানান, সাফিয়ার জন্য তাদের সবার শুভকামনা রয়েছে এবং সকলেই তার সাফল্য কামনা করছেন।
যখন বিমানটি উড়াল দেয়, মশিউর রহমান নিজের অভ্যস্ত কাজগুলোতে ফিরে যান। রাতের বেলা ঘরে ফিরে আসার পর, তিনি বসেন তার পুরোনো পুস্তক ও স্মৃতির ডায়েরির কাছে। সাফিয়ার জীবনের স্মৃতি তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। মশিউর রহমানের চিরচেনা বিশ্ব এখন বদলে গেছে। তার একমাত্র কন্যা, যে ছোটবেলায় তার কোলে চড়ে বেড়াতো, আজ এক নতুন দিগন্তের দিকে যাত্রা করছে। দিনের শেষে, মশিউর রহমান বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েন। আজকের দিনটি তার জীবনের একটি বিশেষ দিন হয়ে থাকবে। তিনি জানেন, সাফিয়া তার সপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তার হৃদয়ে আনন্দ ও গর্বের সাথে এক ধরনের মিশ্র অনুভূতি রয়েছে। মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাঁর মন ভরে উঠেছে আশার আলোয়।
মশিউর রহমান জানেন যে, সাফিয়ার এই নতুন যাত্রা তাকে শুধু নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে নয়, বরং তার পরিবারের গর্বিত সদস্য হিসেবে পরিচিত করবে। তার মেয়ে নতুন কিছু শিখবে, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, এবং সেই অভিজ্ঞতা একদিন তাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেবে।
তারপর রাতের অন্ধকারে, মশিউর রহমান তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। তিনি জানেন, একটি নতুন প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হয়, আর সাফিয়া সেই নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। মশিউর রহমান আশা করেন, তার মেয়ের পথচলা যেন সফল হয় এবং একদিন তার মেয়ে তার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাক।
এইভাবে, একটি পরিবারের ছোট একটি অধ্যায় শেষ হলো, কিন্তু তাদের কাহিনী, তাদের স্বপ্ন, এবং তাদের সাফল্যের যাত্রা চলতে থাকবে অনন্তকাল।
0 Comments