Love story
প্রথম ধাপ: পরিচয় (প্রথম ৩৫০ শব্দ)
অভিজিৎ ছিল একজন সাধারণ মানুষ, যার জীবনটা ছিল রুটিনমাফিক, প্রতিদিনের চাকরি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, আর একাকী রাতগুলো। তার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল একটু ভালোবাসা, কিন্তু সেটা যেন মিলছিল না। বয়স তিরিশের কাছাকাছি, তবুও প্রেমের কোনো সুযোগই সামনে আসেনি। কাজেই অভিজিৎ ঠিক করে নিয়েছিল, সে এবার নিজের মতো করে জীবন কাটাবে। একরকম মেনে নিয়েছিল, হয়তো তার জীবনে ভালোবাসা নেই।
অন্যদিকে, আরুণিমা ছিল একদম উল্টো। মেয়েটি হাসিখুশি, স্বতঃস্ফূর্ত আর দুঃসাহসী। তার চোখে সবসময় আলোর ঝিলিক, আর তার হাসিতে ছিল এক ধরনের আকর্ষণ। তবে সেই আনন্দের পিছনেও ছিল এক গভীর একাকীত্ব।
দীর্ঘ সময় ধরে সে নিজের মতো একাই ছিল, যাকে একেবারে মানিয়ে নিয়েছিল। তারও প্রেমে পড়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সময় যেন তাকে বারবার থামিয়ে দিয়েছিল।
একদিন, একটি বড় শহরের কফি শপে অভিজিৎ আর আরুণিমার প্রথম দেখা হয়। দুজনেই নিজেদের একাকী মনে করে এসেছিল, কিন্তু তাদের প্রথম দেখা যেন এক আকস্মিক বিস্ময় হয়ে দাঁড়ায়। অভিজিৎ তার কাজ শেষ করে কফি নিয়ে বসেছিল, আর পাশের টেবিলেই ছিল আরুণিমা। কিছু একটা লেখায় ব্যস্ত ছিল সে। হঠাৎ, দুজনের চোখাচোখি হয়।
দ্বিতীয় ধাপ: প্রথম কথা ও ভালো লাগা (৩৫০-৭০০ শব্দ)
প্রথমে কিছুই হয়নি। দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে নেয়, তবে খুব দ্রুত আবার নিজেদের কাজে মনোযোগ দেয়। কিন্তু অভিজিৎ কিছুতেই আর মনোযোগ দিতে পারছিল না। তার মনের মধ্যে যেন একটা কৌতূহল দোলা দিচ্ছিল, কে এই মেয়ে?
আসলে আরুণিমারও একই অবস্থা হচ্ছিল। তার কাছে অভিজিৎ একটু আলাদা মনে হচ্ছিল, যদিও সে কল্পনা করছিল না কেন এমন হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে, আরুণিমা নিজের কফি শেষ করে উঠতে যাচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে তার কলম টেবিল থেকে পড়ে যায়। অভিজিৎ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কলমটা তুলে দেয় আর তখনই তাদের মধ্যে প্রথম কথা হয়।
তোমার কলম, অভিজিৎ হাসতে হাসতে বলে।
ওহ, ধন্যবাদ, আরুণিমা হাসি দিয়ে উত্তর দেয়। তুমি এখানেই কাজ কর? অভিজিৎ জানালো, সে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, আর শহরের এক আইটি কোম্পানিতে কাজ করে। তাদের মধ্যে আলাপ শুরু হয়, আর সেই আলাপ যেন থামতেই চাইছিল না। আরুণিমাও জানালো সে একজন লেখক, যদিও এখনো পুরোপুরি পেশাদার লেখক হয়ে উঠতে পারেনি।
তাদের কথোপকথনের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ছিল, যেন তারা বহুদিন পর পরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর, তারা বুঝতে পারে যে তারা একে অপরের অনেক কিছুতেই মিল পাচ্ছে।
Keyword: love story
তৃতীয় ধাপ: সম্পর্কের শুরু (৭০০-১০০০ শব্দ)
অভিজিৎ আর আরুণিমার সেই প্রথম দিনের কথোপকথন এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলেছিল। সময়টা যেন একদম উড়ে গিয়েছিল। তাদের দুজনেরই কফি ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসেনি। আলাপ চলতেই থাকল। প্রথমে ছোট ছোট কথা থেকে বড় বড় বিষয় পর্যন্ত চলে গেলো। দুজনে সিনেমা, বই, সংগীত, এবং জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করল। তাদের মধ্যে এক ধরনের ভালো লাগা তৈরি হচ্ছিল, যা কথায় বোঝানো মুশকিল।
তারা আলাদা হওয়ার সময়, অভিজিৎ কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেল—তাকে কী করা উচিত? আরুণিমাকে কী সে তার নম্বর চাইবে? নাকি অপেক্ষা করবে ভবিষ্যতের জন্য? অবশেষে, সাহস করে অভিজিৎ বলল, আচ্ছা, যদি আবার কফিতে দেখা করি কোনোদিন?
আরুণিমা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুচকি হাসল। কেন নয়? বলে সে তার ফোন বের করে নম্বরটা দিয়ে দিল। অভিজিৎ একটা হাসি দিয়ে নম্বরটা সেভ করল।
এই ছোট্ট ঘটনাটি ছিল তাদের সম্পর্কের প্রথম ধাপ। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হতে লাগল। প্রথমে কেবল কফিশপে দেখা হতো, পরে সেটা রেস্তোরাঁয় ডিনার পর্যন্ত গড়ালো। সময়ের সাথে, তারা বুঝতে পারল যে তাদের মধ্যে শুধু বন্ধুত্ব নয়, কিছু বেশি কিছু অনুভূতি গড়ে উঠছে।
অভিজিৎ এমনিতে খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ হলেও, আরুণিমার সামনে সে অনেক বেশি খোলামেলা হয়ে যেত। অন্যদিকে, আরুণিমা যে মুক্তচিন্তার মেয়ে ছিল, অভিজিৎ তাকে একধরনের সান্ত্বনা দিত, যা আগে সে অনুভব করেনি। তাদের বন্ধন দিনে দিনে গভীর হতে থাকে।
চতুর্থ ধাপ: দ্বিধা ও সংকট (১০০০-১১৫০ শব্দ)
যতই সম্পর্ক এগিয়ে যাচ্ছিল, অভিজিৎ ও আরুণিমা বুঝতে পারছিল, তারা একে অপরকে নিয়ে অনেক বেশি ভাবতে শুরু করেছে। কিন্তু একদিকে অভিজিৎ ভাবছিল, এই সম্পর্ককে কি আরেক ধাপে নিয়ে যাওয়া উচিত? সে বুঝতে পারছিল, আরুণিমাকে সে ভালোবাসে, কিন্তু কোথাও যেন একটা ভয় কাজ করছিল। সম্পর্কের ব্যর্থতার গল্প তার চারপাশে অনেক শুনেছে, তাই সে নিশ্চিত হতে চাইছিল, আরুণিমাও কি একই রকম অনুভব করছে?
আর অন্যদিকে, আরুণিমা সম্পর্কটা নিয়ে একটু সংশয়ে ছিল। অভিজিৎকে তার খুব ভালো লাগত, কিন্তু সে ভয় পেত প্রেমে পড়তে। কারণ আগের সম্পর্কগুলো তাকে কষ্ট দিয়েছে। তাই এই সুন্দর বন্ধুত্বটা নষ্ট হওয়ার ভয়ও তাকে তাড়া করছিল।
এই মানসিক দোলাচলে তারা একদিন একে অপরের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়। এক সন্ধ্যায় রেস্তোরাঁয় ডিনারের পর, অভিজিৎ আর সহ্য করতে না পেরে সরাসরি প্রশ্ন করে বসে, আমাদের মধ্যে যা চলছে, তা কি শুধুই বন্ধুত্ব? নাকি এর কিছু বেশি?
আরুণিমা কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর ধীরে ধীরে বলে, আমি জানি না, অভিজিৎ। আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি, কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি। আমি চাই না যে আমরা দুজনেই কষ্ট পাই।
এই কথা শুনে অভিজিৎ কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে পড়ে, কিন্তু সে বোঝে আরুণিমার দ্বিধা। তুমি ঠিক বলেছ। আমিও চাই না যে আমরা পরে আঘাত পাই। কিন্তু যদি আমরা এই সুযোগটা না নিই, তাহলে হয়তো কখনোই জানতে পারব না যে আমরা একে অপরের জন্য উপযুক্ত কিনা।
পঞ্চম ধাপ: ভালোবাসার স্বীকৃতি ও সম্পর্কের নতুন ধাপ (১১৫০-১৩০০ শব্দ)
এরপর কয়েকটা দিন তারা একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে থাকে, যেন নিজেদের সময় দেয় চিন্তা করার জন্য। কিন্তু এই দূরত্বই তাদের মধ্যে ভালোবাসার অনুভূতিকে আরও পরিষ্কার করে তোলে। তারা দুজনেই বুঝতে পারে যে, একে অপরের জন্য তারা যা অনুভব করছে, সেটি সত্যিকারের প্রেম।
অভিজিৎ একদিন সাহস করে আরুণিমাকে ফোন করে বলে, চল, আবার একবার দেখা করি, আর খোলাখুলি কথা বলি। আরুণিমাও সায় দেয়। তারা কফিশপে আবার দেখা করে, সেই প্রথম দিনের মতোই। কিন্তু এবার, অভিজিৎ আর দ্বিধা করে না। সে আরুণিমার হাতে ধরে বলে, আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। আমি জানি, জীবন সহজ নয়, সম্পর্কও তেমন নয়, কিন্তু আমি চাই তুমি আমার জীবনের অংশ হও।
আরুণিমা অভিজিতের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর এক ঝলক হাসি দিয়ে বলে, তুমিও আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, অভিজিৎ। আমি এতদিন ধরে যা অনুভব করছিলাম, সেটাই সত্যি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
এই মুহূর্তটি ছিল তাদের সম্পর্কের নতুন শুরু। তারা বুঝে যায়, জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জে একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েই তারা এগিয়ে যাবে। তাদের মধ্যে যে ভালোবাসা জন্ম নিয়েছিল, তা ধীরে ধীরে পরিণত হতে থাকে। অভিজিৎ ও আরুণিমা একে অপরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে—একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ, যেখানে দুজনের একসঙ্গে থাকা, একসঙ্গে হাসা-কাঁদা, সবকিছুই থাকবে।
গল্পটি শেষ হয় তাদের একে অপরকে ভালোবাসা প্রকাশ করার মাধ্যমে, যেখানে জীবনের যেকোনো সমস্যার সামনে দুজন একসঙ্গে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি নেয়।
0 Comments