নিশির কান্না
গ্রামের কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল একটি পুরনো বাড়ি। বাড়িটি বহু বছর আগে একটি বিপদগ্রস্ত পরিবারে বাস করেছিল। তারপর থেকে, এই বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল। গ্রামের লোকেরা বলত যে বাড়িটিতে রাতে অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায় এবং অদৃশ্য কান্নার শব্দ ভেসে আসে।
একদিন, শহরের কৌতূহলী যুবক রোহিত তার বন্ধুদের নিয়ে সেই পুরনো বাড়িতে ভেতরে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেয়। বন্ধুরা ভয় নিয়ে প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, কিন্তু রোহিত তাদের মনের সাহস জোগাল এবং সবাই বাড়ির দিকে রওনা হল।
বাড়িতে ঢুকেই তারা একটি অদ্ভুত শান্তি অনুভব করল, যেন সেখানে সময় থেমে গেছে। রোহিত তাদেরকে বাড়ির নানা অংশ ঘুরিয়ে দেখাল, কিন্তু কিছুই অস্বাভাবিক লাগছিল না। অন্ধকার রাতে, তারা একটি পুরনো টেবিল ঘেঁটে, তাতে একটি পুড়ানো মোমবাতি ও কিছু পুরনো কাগজ পেল।
কাগজগুলোর মধ্যে একটি চিঠি ছিল, যার লেখায় লেখা ছিল, আমার হত্যার প্রতিশোধ নাও। আমি এখানে আছি, কিন্তু শান্তি পাচ্ছি না। চিঠি পড়ে রোহিতের মনে অস্বস্তি তৈরি হলো। কিন্তু সে ভাবল, হয়তো এটা কেবল একটি পুরনো গুজব।
তারা বাড়ির সেকেন্ড ফ্লোরে উঠল। সেখানে একটি পুরনো বেডরুমের দরজা খোলা ছিল। রোহিত ঘরের ভিতরে ঢুকতেই সে লক্ষ্য করল যে দেওয়ালের একটি অংশ অদ্ভুতভাবে ফাঁকা। ফাঁকা অংশে রোহিত একটি পুরনো বই খুঁজে পেল, বইটি এক ধরনের সাধনা ও মন্ত্রনির্ভর। বইটি পড়তে গিয়ে রোহিত দেখতে পেল যে সেখানে কিছু বিশেষ মন্ত্র রয়েছে যা মৃত আত্মাদের শান্তি আনার জন্য ব্যবহৃত হয়। রোহিত মন্ত্রগুলির বিষয়ে চিন্তা করতে লাগল, কিন্তু তার মনে হল যে এটি সবকিছু পরিবর্তন করতে পারে।
নিশির অন্ধকারে, রোহিত ও তার বন্ধুরা হঠাৎ একটি ভয়ঙ্কর কান্নার শব্দ শুনতে পেল। শব্দটি ক্রমেই জোরালো হচ্ছিল। তারা দেখতে পেল যে ঘরের এক কোণে একটি কালো ছায়া উঁকি দিচ্ছে। ছায়াটি ধীরে ধীরে তাদের দিকে আসছিল, এবং কান্নার শব্দও ক্রমেই ভয়ানক হয়ে উঠছিল।
রোহিত একটি সাহসী পদক্ষেপ নেয় এবং ছায়ার দিকে এগিয়ে যায়। ছায়ার নিকটে পৌঁছেই সে বুঝতে পারে যে এটি একটি নারীর অদৃশ্য আত্মা। তার চোখে ছিল বিরাট দুঃখ এবং ক্ষোভ। রোহিত তার হাত থেকে মন্ত্রপুস্তিকা বের করে এবং একে একে মন্ত্রগুলো উচ্চারণ করতে শুরু করে।
ছায়ার উপস্থিতি আরও ঘন হয়ে উঠে এবং কান্নার শব্দ আরও তীব্র হতে থাকে। রোহিত দ্রুত মন্ত্র পড়া শেষ করে। হঠাৎ, বাতাসে একটি শক্তিশালী ঝাঁকুনি ঘটে এবং অদৃশ্য নারীটির কান্না স্তব্ধ হয়ে যায়।
সবকিছু শান্ত হলে, রোহিত বুঝতে পারে যে আত্মাটি শান্তি পেয়েছে। রাতের অন্ধকারে একটি স্নিগ্ধ শান্তি ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধুরা অদ্ভুত এই অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ির বাইরে চলে আসে।
পরের দিন, গ্রামের লোকেরা দেখে যে পুরনো বাড়িটি আর ভূতের গল্পগুলির অংশ নয়। আত্মার কান্না ও ছায়ার উপস্থিতি আর শোনা যায়নি। রোহিত ও তার বন্ধুদের সাহসিকতা এবং মন্ত্রের সাহায্যে সেই বাড়ির আত্মা শান্তি পেয়েছিল।
অতীতের স্মৃতির মতো, পুরনো বাড়িটি এখন গ্রামের ইতিহাসে এক ভয়ঙ্কর গল্প হিসেবে রয়ে গেছে, কিন্তু এর ভয়াবহতা আর কেউ অনুভব করেনি। রোহিত এবং তার বন্ধুরা তাদের জীবনে একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে উঠেছিল, যা তারা কখনও ভুলতে পারবে না।
0 Comments