ভূতের গল্প
প্রথম ধাপ: পরিচয়
বৃষ্টি ভেজা এক সন্ধ্যা। রিমঝিম বৃষ্টির শব্দে পুরো গ্রামের পরিবেশ এক অদ্ভুত শান্তিতে ভরে উঠেছিল। এ রকম পরিবেশে সাধারণত মানুষ ঘরে বসে চা বা কফি নিয়ে আরাম করে, কিন্তু সেদিন রাহুলের মনে ছিল অন্য কিছু। গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি পুরনো বাড়ি নিয়ে অনেকদিন ধরেই গুজব ছড়াচ্ছিল। বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কেউ কেউ বলে বাড়ির ভেতর থেকে রাতে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়, আবার কেউ বলে রক্তের দাগ নাকি বারবার সেখানে দেখা যায়। কিন্তু সত্যি কি? তা কেউ জানে না।
রাহুল শহর থেকে গ্রামে এসেছিল কিছুদিনের জন্য। ঢাকার ব্যস্ত জীবন থেকে দূরে এসে গ্রামের নির্জনতায় সময় কাটানোর জন্যই এসেছিল সে। কিন্তু সেই পুরনো বাড়ির গল্প তাকে কৌতূহলী করে তুলেছিল। গ্রামের লোকেরা বারবার তাকে নিষেধ করলেও, সে ঠিক করেছিল যে সে সেখানে একবার ঢুঁ মেরে আসবেই। সে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল যে এসব ভূতের গল্প কেবল মানুষকে ভয় দেখানোর জন্যই বানানো হয়।
দ্বিতীয় ধাপ: গন্তব্যের পথে
বিকেলের শেষ আলো মরে যেতে যেতে রাহুল একাই বেরিয়ে পড়ল সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে। ছোট রাস্তা পেরিয়ে একটি বাঁশবনের পাশ দিয়ে যেতে যেতে তার মন কিছুটা অস্বস্তিতে ভরে উঠল। রাস্তায় আর কেউ ছিল না, কেবল পেছনে পেছনে কিছু কাক ডাকছিল। সন্ধ্যার অন্ধকারে ঝিঁঝির ডাক, বৃষ্টির ছাঁট, আর ঠাণ্ডা বাতাস রাহুলকে এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু সে থামল না।
বাঁশবনের পেছনেই ছিল সেই পুরনো বাড়িটি। বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে রাহুলের হঠাৎ করে গা শিউরে উঠল। বাড়ির দেওয়াল ভাঙা, ছাদের টিনগুলো মরিচা ধরে আছে, জানালার কাঁচ ভাঙা, আর তার ভেতর থেকে শীতল বাতাস বের হচ্ছিল। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ছিল দরজার সামনে পড়ে থাকা বিশাল রক্তের দাগ। দাগটা তাজা মনে হচ্ছিল, যেন এক্ষুনি কেউ আহত হয়েছে।
কীওয়ার্ড: ভূতের গল্প
তৃতীয় ধাপ: রহস্যময় আওয়াজ
রাহুল বুক ধুকধুক করতে করতে দরজার কাছে গেল। হাত বাড়িয়ে দরজাটা ঠেলে খুলল। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে একটা ভয়ংকর শব্দ শুনতে পেল সে, যেন কেউ দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু শব্দটা স্পষ্ট নয়। চারপাশে তাকিয়ে দেখল ঘরের
দেয়ালগুলোয় পুরনো ছবি ঝুলছে। ছবিগুলোতে কেউ নেই, কেবল অন্ধকারময় চেহারা। দেওয়ালে ফাটল ধরা, আর মেঝেতে ধুলো জমে আছে। কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ।
হঠাৎই তার মনে হলো যে কেউ একজন তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল। পেছনে কেউ নেই, কিন্তু বাতাসের মধ্যে হালকা সোঁ সোঁ আওয়াজ হচ্ছিল। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ঘরের বাতাস ক্রমশ ভারী হয়ে আসছিল, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি ঘরের ভেতর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। রাহুল তাড়াতাড়ি ঘরের এক কোণে থাকা পুরনো সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সিদ্ধান্ত নিল।
চতুর্থ ধাপ: অন্ধকারের ভেতর একা
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় তার প্রতিটি ধাপ যেন তার নিজের জীবনের শেষ ধাপ। সিঁড়ির এক এক ধাপ বেয়ে ওঠার সময় মচমচ আওয়াজ হচ্ছিল। রাহুলের মনে হচ্ছিল কেউ বা কিছু তার পেছনে আসছে, কিন্তু সাহস করে সে পেছনে তাকাচ্ছিল না। পুরো বাড়িটা যেন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
দোতলায় উঠে আসতেই হঠাৎ একটা হালকা হাওয়ার ঝাপটা এসে রাহুলকে ধাক্কা দিল। কিন্তু এই হাওয়া কোনো সাধারণ বাতাসের মতো নয়, যেন কারও গা থেকে বের হওয়া শীতল নিঃশ্বাস। দোতলার বারান্দায় পা ফেলতেই তার চোখ গেল ঘরের এক কোণে। সেখানে একটা আয়না রাখা ছিল। আয়নায় নিজেকে দেখার মুহূর্তে সে দেখল, তার প্রতিবিম্ব নেই, বরং সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়ংকর চেহারার মানুষ!
0 Comments