রূপকথার গল্প
ধাপ ১: রহস্যময় আবিষ্কার
ছোট্ট রাহাত ছিল খুবই চঞ্চল আর কৌতূহলী ছেলে। প্রতিদিন নতুন কিছু খুঁজে বের করতে পারলেই তার মন ভালো হয়ে যেত। একদিন স্কুল থেকে ফিরে বিকেলের দিকে সে খেলতে বের হয়। তার বাগানের এক কোণায় বড় একটি পুরনো গাছ ছিল, আর সেই গাছের পেছনে থাকা পুরনো বাক্সটি সে আগে কখনো দেখেনি। গাছের নিচে ঘাসের ভেতর কিছু একটা চকচক করছিল। রাহাত কাছে গিয়ে দেখল মাটির নিচে লুকানো ছিল কাঠের পুরনো এক বাক্স। ধুলায় মোড়া বাক্সটি দেখেই তার আগ্রহ চরমে পৌঁছাল।
এটা এখানে কীভাবে এলো? ভেবে সে বাক্সটি দ্রুত খুলল। বাক্সের ভেতরে পাওয়া গেল পুরনো একটা চশমা। পুরোটাই ধূলোয় ঢাকা, এমন চশমা রাহাত আগে কখনো দেখেনি। কিন্তু এর কাঁচের ভেতর দিয়ে উজ্জ্বল কিছু একটা ঝিলিক দিচ্ছিল। রাহাত কিছু না ভেবেই চশমাটি চোখে দিয়ে ফেলল। তখনই মজার এক ঘটনা ঘটল!
ধাপ ২: জাদুর প্রথম প্রভাব
রাহাতের চোখে চশমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চারপাশ বদলে গেল! গাছপালা, ঘাস, এমনকি আকাশের রংও বদলে এক অদ্ভুত রঙিন দুনিয়ায় পরিণত হলো। গাছের পাতাগুলো গোলাপি, আকাশে সাদা মেঘের বদলে নীল মাছেরা উড়ছে, আর চারপাশে ছোট ছোট পরীরা উড়ে বেড়াচ্ছে। রাহাত কিছুটা ভয় পেলেও খুব মজা লাগছিল।
তখনই সে দেখল এক ছোট্ট পরী তার সামনে এসে ভাসছে। পরীটি বলল, আমি ঝিনুক! তুমি এই জাদুর চশমা পেয়েছ, তাই তোমাকে এক আশ্চর্য জগতে নিয়ে যাব!
রাহাত অবাক হয়ে বলল, এই চশমার কি সত্যিই জাদু আছে?
ঝিনুক হেসে বলল, অবশ্যই! কিন্তু এই চশমার ক্ষমতা ব্যবহার করতে হলে তোমাকে কিছু রহস্য সমাধান করতে হবে। প্রস্তুত হও, আমরা শুরু করছি!
ধাপ ৩: জাদুর জগতে যাত্রা
ঝিনুকের কথামতো রাহাত ধীরে ধীরে সেই রঙিন জগতে এগিয়ে চলল। সেই দুনিয়াটা ছিল রূপকথার মতো। সবকিছুই স্বপ্নের মতো লাগছিল। রাহাত কখনো এমন জগতে পা রাখবে, তা ভাবেনি। হঠাৎ করেই ঝিনুক বলল, দেখো রাহাত, সামনের ওই পাথুরে গেটটা। ওটা খুলতে হলে তোমাকে প্রথম ধাঁধা সমাধান করতে হবে।
রাহাত একটু ভয় পেয়ে গেল। সে তো ধাঁধার কথা ভাবেনি! তবে সে জানত, ধাঁধা সমাধান করতে পারলে অনেক মজার কিছু ঘটবে। সে তাই প্রস্তুত হলো। ঝিনুক বলল, শুনো, ধাঁধাটা হলো— যা নেই, তাই দিয়ে গড়া, তবু দেখতে পাওয়া যায়। বলো তো আমি কী?
রাহাত কিছুক্ষণ ভাবল। সে চারপাশে তাকিয়ে ধাঁধার উত্তর খুঁজতে লাগল। হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি এল। সে বলল, অভ্র! মেঘ তো আসলে নেই, কিন্তু আমরা সেটাকে দেখতে পাই!
ঝিনুক খুশি হয়ে বলল, বাহ! তুমি তো খুব বুদ্ধিমান! চলো, গেটটা খুলে যাই।
কিওয়ার্ড: রূপকথার গল্প
ধাপ ৪: নতুন বন্ধু
গেট পেরিয়ে তারা যখন আরও ভেতরে গেল, রাহাত দেখতে পেল আরও কিছু মজার প্রাণী। একটা বিশাল টকটকে লাল রঙের খরগোশ আর সোনালি রঙের ছোট্ট এক টিকটিকি তাকে দেখে হাসি মুখে এগিয়ে এল। খরগোশের নাম ছিল রবি আর টিকটিকির নাম ছিল টিকো। তারা রাহাতকে দেখেই বলল, তুমি কি নতুন অতিথি? আমাদের এই জাদুর দুনিয়ায় সবাই ধাঁধা সমাধান করতে আসে!
রাহাত অবাক হয়ে বলল, তোমরা সব জানো? আমি তো কিছুক্ষণ আগেই এখানে এসেছি!
রবি বলল, এই দুনিয়ায় যারাই আসে, তারা সব সময়ই আমাদের নতুন বন্ধু হয়। আমরা মিলে মজা করি আর অনেক ধাঁধা সমাধান করি। টিকোও খুশি হয়ে বলল, চলো, আমরা একসঙ্গে আরও নতুন রহস্য আবিষ্কার করি।
ধাপ ৫: চশমার শেষ রহস্য
তারা মিলে এবার আরও ভেতরের দিকে এগিয়ে চলল। হাঁটতে হাঁটতে তারা পৌঁছাল এক অদ্ভুত জায়গায়, যেখানে সবকিছু কাঁচের মতো স্বচ্ছ। জায়গাটির মধ্যে বড় এক দরজা ছিল। দরজার ওপারে কী আছে, তা কেউই জানে না। ঝিনুক বলল, এটাই তোমার শেষ রহস্য, রাহাত। এই দরজা খুলতে পারলে তুমি জানতে পারবে জাদুর চশমার শেষ ক্ষমতা কী।
রাহাত আবারও প্রস্তুত হলো। দরজার সামনে গিয়ে সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, এবার ধাঁধা কী?
দরজার ওপাশ থেকে একটি কণ্ঠস্বর এল, শোনো, ধাঁধাটা হলো— তোমার যতই দূরত্ব থাকুক, তুমি আমার সঙ্গেই থাকো, কী আমি?
রাহাত কিছুক্ষণ ভেবে বলল, ছায়া! মানুষ যেখানেই যায়, ছায়া তার সাথে থাকে!
দরজাটি ধীরে ধীরে খুলে গেল, আর ভিতরে এক বিশাল আলোর ঝলকানি দেখা দিল। রাহাত ও তার বন্ধুরা দরজার ভেতরে প্রবেশ করল। তারা দেখল এক জাদুর আয়না ঝলমল করছে।
ধাপ ৬: বাস্তবে ফিরে আসা
ঝিনুক বলল, এটাই সেই জাদুর আয়না। এতে তুমি ভবিষ্যৎ দেখতে পারবে, কিন্তু যদি তুমি চশমা খুলে ফেলো, তাহলে তুমি আর এই দুনিয়ায় ফিরতে পারবে না।
রাহাত কিছুক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে রইল। সে ভাবল, এমন জাদুর দুনিয়ায় থাকা অবশ্যই মজার, কিন্তু তার মা-বাবা, বন্ধুরা তো তাকে খুঁজবে। সে কি তাদের ছেড়ে এখানে থাকতে পারবে?
শেষমেশ রাহাত সিদ্ধান্ত নিল। সে আস্তে করে চশমা খুলে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু মিলিয়ে গেল। চারপাশ আবার আগের মতো হয়ে গেল, আর রাহাত তার বাগানের কোণায় ফিরে এল। পুরনো বাক্সটি ছিল, কিন্তু চশমাটি তাতে আর নেই।
ধাপ ৭: স্মৃতি রয়ে গেল
রাহাত চশমার জাদুর দুনিয়া থেকে ফিরে আসলেও, তার স্মৃতিতে সবকিছু রয়ে গেল। সেই রহস্যময় চশমা আর তার নতুন বন্ধুরা, ঝিনুক, রবি, টিকো— সবাই যেন তার মনে একটি নতুন গল্পের পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে গেল।
0 Comments