Nikola Tesla's Groundbreaking Inventions that Shaped Modern Technology

Nikola Tesla's Inventions. Nikola Tesla's innovations, including AC power and the Tesla coil, revolutionized modern technology.

 Nikola Tesla's Inventions

Nikola Tesla's Inventions


নিকোলা টেসলা: বৈদ্যুতিক বিপ্লবের স্বপ্নদ্রষ্টা (অধ্যায়-১)

জন্ম ও শৈশব

নিকোলা টেসলা জন্মগ্রহণ করেন ১০ জুলাই, ১৮৫৬ সালে, বর্তমান ক্রোয়েশিয়ার স্মিলজান গ্রামে। তার বাবা মিলুতিন টেসলা ছিলেন একজন সার্বিয়ান অর্থোডক্স পুরোহিত এবং মা জর্জিনা ম্যান্ডিক ছিলেন একজন গৃহিণী, যিনি দক্ষ কারিগরও ছিলেন। টেসলার পরিবার ছিল বিদ্যাবুদ্ধি ও সৃজনশীলতায় পরিপূর্ণ, যা তাকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতায় উৎসাহিত করেছিল। তার মা ঘরের কাজের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করতেন, যা ছোট্ট নিকোলার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

শিক্ষাজীবন

টেসলা শৈশব থেকেই প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি গণিত ও বিজ্ঞানে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন এবং তার মেধা শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ১৮৭৫ সালে তিনি গ্রাজ পলিটেকনিক স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন, যেখানে তিনি বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি খুব আগ্রহ সহকারে ইঞ্জিনিয়ারিং ও পদার্থবিদ্যার ক্লাসে অংশ নিতেন এবং বৈদ্যুতিক সার্কিটের নতুন নতুন ধারণা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেন।

অবশ্য, তার একাডেমিক জীবন ছিল অনেক বাধাবিঘ্নপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় টেসলা বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হন, এমনকি তিনি ডিগ্রি সম্পন্নও করতে পারেননি। তবে, তার বিদ্যুৎবিজ্ঞানে আগ্রহ কখনোই কমেনি এবং তিনি নিজস্ব চিন্তাভাবনার ভিত্তিতে বিভিন্ন উদ্ভাবন করতে থাকেন।

টেসলার ক্যারিয়ার: জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্র (অধ্যায়-২)

বৈদ্যুতিক বিপ্লবের সূচনা

১৮৮২ সালে, টেসলা জার্মানির একটি টেলিফোন কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। সেখানেই তিনি আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের উদ্ভাবিত টেলিফোনের কাজের উপর ভিত্তি করে বিদ্যুতের কার্যপ্রণালী নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এরপর তিনি প্যারিসে এডিসন কোম্পানিতে কাজ করেন, যেখানে তিনি ডায়নামো ও মোটর নিয়ে কাজ করার সুযোগ পান।

১৮৮৪ সালে টেসলা যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং সেখানে বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক টমাস এডিসনের সাথে কাজ শুরু করেন। এডিসনের সাথে কাজ করার সময় টেসলা এডিসনের বৈদ্যুতিক সিস্টেমের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা খুঁজে পান এবং তার সমাধান হিসেবে নতুন ধারণা প্রদান করেন। কিন্তু এডিসন এই ধারণাগুলোকে সমর্থন করেননি, ফলে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

টেসলা ও এডিসনের দ্বন্দ্ব

টেসলা এবং এডিসনের মধ্যে মূল দ্বন্দ্ব ছিল 'ডিসি' (ডাইরেক্ট কারেন্ট) ও 'এসি' (অল্টারনেটিং কারেন্ট) বিদ্যুৎ নিয়ে। এডিসন ডাইরেক্ট কারেন্ট বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন, যেখানে বিদ্যুৎ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হয়। কিন্তু টেসলা বিশ্বাস করতেন অল্টারনেটিং কারেন্ট অনেক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ, কারণ এটি দীর্ঘ দূরত্বে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে সক্ষম।

টেসলার এসি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাটি সময়ের সাথে সঠিক বলে প্রমাণিত হয় এবং পরবর্তীকালে এটি আধুনিক বৈদ্যুতিক গ্রিডের ভিত্তি হয়ে ওঠে। এডিসনের সঙ্গে তার কাজের সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর, টেসলা নিজেই উদ্ভাবনের পথে হাঁটেন।

টেসলার আবিষ্কার: এসি বিদ্যুৎ এবং আরো কিছু (অধ্যায়-৩)

এসি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা

নিকোলা টেসলার সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কার হলো এসি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এসি বিদ্যুৎ এক ধরণের বৈদ্যুতিক প্রবাহ যা সময়ের সাথে সঙ্গে বারবার দিক পরিবর্তন করে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘ দূরত্বে বিদ্যুৎ পরিবহন করা অনেক সহজ হয়ে যায়।

টেসলা ১৮৮৮ সালে তার এসি ইলেকট্রিক মোটরের উদ্ভাবনের জন্য আমেরিকান ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে একটি বক্তব্য দেন। এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে টেসলা বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটান।

ওয়েস্টিংহাউস ও সফলতা

১৮৮৮ সালে টেসলা তার এসি সিস্টেমের পেটেন্ট বিক্রি করেন বিখ্যাত উদ্ভাবক ও ব্যবসায়ী জর্জ ওয়েস্টিংহাউসের কাছে। ওয়েস্টিংহাউস টেসলার এসি সিস্টেমকে নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং এটি দ্রুত সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে টেসলার খ্যাতি ও আর্থিক সফলতা দুটোই বৃদ্ধি পায়।

১৮৯৩ সালের শিকাগো ওয়ার্ল্ড ফেয়ার-এ ওয়েস্টিংহাউসের মাধ্যমে টেসলার এসি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ব্যবহার করে সম্পূর্ণ মেলাটি আলোকিত করা হয়। এই প্রদর্শন এসি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দক্ষতা ও নিরাপত্তা সবার সামনে তুলে ধরে।

টেসলার আরো কিছু উদ্ভাবন (অধ্যায়-৪)

রেডিও ও টেলিভিশন

যদিও সাধারণত গুগলিয়েলমো মার্কোনিকে রেডিওর আবিষ্কর্তা হিসেবে গণ্য করা হয়, আসলে টেসলা রেডিও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। টেসলা তার একাধিক পেটেন্টে তার রেডিও যোগাযোগের বিভিন্ন উপাদানের উদ্ভাবন করেছিলেন। ১৯৪৩ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট টেসলাকেই প্রকৃত রেডিওর উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

এক্স-রে ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রিসার্চ

টেসলা তার জীবদ্দশায় এক্স-রে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক্স-রে ছবির ধারণা তুলে ধরেন। তার গবেষণার ফলাফল পরবর্তীতে এক্স-রে প্রযুক্তির উন্নতিতে সহায়ক হয়।

টেসলা কয়েল

১৮৯১ সালে টেসলা 'টেসলা কয়েল' আবিষ্কার করেন। এটি একটি বৈদ্যুতিক রেজোন্যান্স ট্রান্সফর্মার সার্কিট, যা আজও রেডিও, টেলিভিশন, এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। এটি উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম এবং বিদ্যুৎ সংক্রান্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

টেসলার শেষ জীবন (অধ্যায়-৫)

আর্থিক কষ্ট

যদিও নিকোলা টেসলা তার জীবদ্দশায় অসংখ্য আবিষ্কার করেছেন, তিনি আর্থিক দিক থেকে সবসময় সফল ছিলেন না। অনেক ক্ষেত্রে তিনি তার আবিষ্কার থেকে তেমন লাভ করতে পারেননি। তার উদ্ভাবনগুলোর পেটেন্ট বিক্রি করলেও আর্থিক সংকট তার পিছু ছাড়েনি। শেষ জীবনে তিনি খুবই দারিদ্র্য ও অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

টেসলা মারা যান ৭ জানুয়ারি, ১৯৪৩ সালে নিউ ইয়র্কের একটি হোটেল কক্ষে। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮৬ বছর। তার উদ্ভাবনী শক্তি ও বৈজ্ঞানিক মেধা মানবজাতির জন্য এক বিশাল সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়। আজও টেসলার নাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে স্থান পেয়েছে।

টেসলার প্রভাব ও উত্তরাধিকার (অধ্যায়-৬)

বৈজ্ঞানিক অবদান

নিকোলা টেসলার বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনগুলোর প্রভাব আধুনিক প্রযুক্তিতে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। এসি বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে রেডিও প্রযুক্তি পর্যন্ত, তার আবিষ্কারগুলো আজকের বৈদ্যুতিক গ্রিড ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ভিত্তি। তার উদ্ভাবিত টেসলা কয়েল আজও বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

জনমানসে প্রভাব

টেসলা তার জীবদ্দশায় বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের অনুপ্রাণিত করেছেন। তার ভবিষ্যত দর্শন ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা মানুষকে নতুন নতুন আবিষ্কারে উৎসাহিত করেছে। তার স্মরণে বিভিন্ন চলচ্চিত্র, বই, এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানে তার জীবন ও কাজ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।

টেসলার নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান

টেসলার নামানুসারে 'টেসলা ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টিটিউট' এবং 'টেসলা মোটরস' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার স্মরণে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও তার নাম অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছে।

উপসংহার

নিকোলা টেসলা ছিলেন এক অসাধারণ বিজ্ঞানী, যার উদ্ভাবনী চিন্তা ও বৈজ্ঞানিক মেধা আজও সমাদৃত। তার জীবন ছিল একটি উদাহরণ, কিভাবে স্বপ্ন ও কঠোর পরিশ্রম মানুষকে পৃথিবীর এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে। বৈদ্যুতিক বিপ্লবের এই স্বপ্নদ্রষ্টার উত্তরাধিকার আজও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজমান।

এরকম বিষয়ে আরোও জানতে এই ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নিয়মিত নতুন নতুন বিষয় আপডেট হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট রয়েছে যেমন: বিভিন্ন বস্তুর আবিষ্কার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, ছোটদের মজার রূপকথার গল্প, সাফল্য নিয়ে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি এবং স্ট্যাটাস, বিখ্যাত মনীষীদের সাফল্য জীবনকাহিনী, মজার মজার জোকস ও কৌতুক, ভূতের গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, প্রেমের কাহিনী, কাব্য উপন্যাস,শরীর সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারদের টিপস, ইসলামিক হাদিস , ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটের https://www.mahadistoryworld.com/

إرسال تعليق