এই গল্পটি যাদের জন্য যারা নিজের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। যারা সফলতা পেতে চান। তারা এই গল্পটি হাতছাড়া করবেন না। এটি একটি সফলতার গল্প।
### রূপকথার গল্প: জীবনে জানালা
অনেক দিন আগের কথা। একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল যেখানে শান্তি ও সৌহার্দ্যে মানুষ বাস করত। গ্রামটির চারপাশে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি আর মাঝখানে একটি নদী। এই গ্রামের এক কোণে একটি মেয়ে বাস করত, যার নাম ছিল সুরাইয়া। সুরাইয়া ছিল খুবই কৌতূহলী এবং স্বপ্নবিলাসী। সে সবসময় একটি বিশেষ জানালার গল্প শুনত, যা দিয়ে জীবনের সব রহস্য দেখা যায়।
### গল্পের শুরু
সুরাইয়ার দাদু ছিলেন গ্রামের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কাহিনী জানতেন এবং তা ছোটদের শুনাতেন। একদিন সন্ধ্যায়, যখন সূর্য ডুবতে শুরু করেছে, সুরাইয়া তার দাদুর কাছে গিয়ে বসল। তার চোখে কৌতূহল, মনে হাজার প্রশ্ন। দাদু বললেন, "আজ আমি তোমাকে একটি বিশেষ জানালার গল্প শোনাবো। এই জানালাটি এমন একটি জানালা যা দিয়ে জীবনের সব রহস্য দেখা যায়। এটি কোথাও লুকানো আছে এবং এটিকে খুঁজে পেতে সাহস ও ধৈর্যের প্রয়োজন।"
### যাত্রার প্রস্তুতি
সুরাইয়ার কৌতূহল ও দুঃসাহসিক মন তাকে জানালাটি খুঁজে বের করার জন্য প্রেরণা দিল। পরের দিন সকালে, সে তার মাকে জানাল এবং যাত্রার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। তার মা তাকে বিদায় জানিয়ে বললেন, "মনে রেখো, সুরাইয়া, প্রকৃত জানালা হলো তোমার নিজের মন। জীবনকে ভালভাবে দেখতে হলে তোমার হৃদয় ও মনকে উন্মুক্ত রাখতে হবে।"
সুরাইয়া কয়েকটি প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করল। তার সাথে ছিল কিছু খাবার, পানি, এবং একটি ছোট্ট নোটবুক ও পেন্সিল, যেখানে সে তার অভিজ্ঞতা লিখবে।
### প্রথম বাধা: গহন অরণ্য
সুরাইয়া প্রথমে পৌঁছাল একটি ঘন জঙ্গলে। জঙ্গলে প্রবেশ করার আগে সে কিছুক্ষণ থামল এবং চারপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করল। তারপর সে গভীরে প্রবেশ করল। জঙ্গলে ছিল বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি এবং গাছপালা। কিছু পশু তাকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সুরাইয়া তাদের ভালবাসা ও সাহস দিয়ে জয় করল। সে জানত, ভয় পেলে পথ চলা যাবে না।
একদিন, জঙ্গলের মধ্যে সে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘর দেখতে পেল। সেখানে বাস করত এক বৃদ্ধা। বৃদ্ধা তাকে আশ্রয় দিলেন এবং রাতের খাবার দিলেন। সুরাইয়া বৃদ্ধার কাছে জানালার গল্প বলল। বৃদ্ধা হেসে বললেন, "প্রকৃত জানালা হলো তোমার নিজের মন, কিন্তু তুমি যদি সত্যিই সেই বিশেষ জানালা দেখতে চাও, তাহলে তোমাকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।"
### দ্বিতীয় বাধা: উঁচু পাহাড়
সুরাইয়া আবার যাত্রা শুরু করল। এবার তাকে অতিক্রম করতে হবে উঁচু পাহাড়। পাহাড়টি ছিল অনেক খাড়া এবং চড়াই। তবে সুরাইয়ার মনে ছিল দৃঢ় সংকল্প। সে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগল। পাহাড়ে উঠতে গিয়ে সে অনেকবার পড়ে গেল, তবুও সে হার মানল না।
একদিন, পাহাড়ের উপরে সে একটি ঝরনা দেখতে পেল। ঝরনার জল ছিল স্ফটিকের মতন স্বচ্ছ এবং ঠাণ্ডা। সে ঝরনার জলে মুখ ধুল এবং তৃষ্ণা মেটাল। ঝরনার পাশে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সে আবার যাত্রা শুরু করল।
### তৃতীয় বাধা: গভীর নদী
উঁচু পাহাড় অতিক্রম করার পর সুরাইয়া পৌঁছাল একটি গভীর নদীর সামনে। নদীর জল ছিল স্রোতস্বিনী এবং খরস্রোতা। নদী পার হতে গেলে তাকে অনেক সতর্ক থাকতে হবে। সুরাইয়া কিছুক্ষণ নদীর পাড়ে বসে ভাবল, কিভাবে নদী পার হবে।
সে নদীর পাড়ে কিছু গাছের ডাল সংগ্রহ করল এবং একটি ভেলা তৈরি করল। ভেলায় বসে সে নদী পার হতে লাগল। নদীর স্রোত ছিল অনেক তীব্র, কিন্তু সুরাইয়ার সাহস ও ধৈর্য তাকে নদী পার করতে সাহায্য করল। অবশেষে, সে নদীর ওপারে পৌঁছাল।
### গন্তব্যের কাছে
নদী পার হওয়ার পর সুরাইয়া দেখতে পেল একটি প্রাচীন মন্দির। মন্দিরটি ছিল অনেক পুরনো এবং জীর্ণ। সুরাইয়া মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেল। মন্দিরের দরজা খোলা ছিল এবং ভিতরে প্রবেশ করার পর সে দেখতে পেল একটি ছোট জানালা। জানালাটি ছিল সোনার ফ্রেম দিয়ে মোড়ানো এবং তার মধ্যে ঝকঝকে কাঁচ।
### জানালার রহস্য
সুরাইয়া জানালার কাছে গিয়ে তাকাল। হঠাৎ করে জানালাটি আলোতে ভরে উঠল এবং সে দেখতে পেল তার জীবনের সব স্মৃতি। তার ভাল সময়, খারাপ সময়, তার হাসি, তার কান্না সব কিছু সে দেখতে পেল। জানালাটি তাকে শিখাল, জীবন হলো একটি যাত্রা যেখানে ভাল এবং মন্দ মিলিয়ে সবকিছুই আছে।
সুরাইয়া বুঝতে পারল, জীবনের জানালা আসলে তার নিজের মন। জীবনকে ভালভাবে দেখতে হলে তার মনকে উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিখতে হবে। এই উপলব্ধি নিয়ে সে গ্রামে ফিরে এল এবং তার গল্প সবাইকে বলল।
### শিক্ষার ফল
গ্রামে ফিরে এসে সুরাইয়া তার অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে বলল। গ্রামের সবাই তার গল্প শুনে অভিভূত হল। তারা বুঝতে পারল, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমাদেরকে নতুন কিছু শেখায়। জীবনের জানালা হলো আমাদের নিজের হৃদয় ও মন। যদি আমরা আমাদের মনকে খোলা রাখি এবং জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিখি, তাহলে জীবন হবে আরও সুন্দর এবং অর্থবহ।
সুরাইয়ার এই গল্পটি গ্রামের সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল এবং সবার মনকে উজ্জীবিত করল। তারা বুঝতে পারল, জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতা একটি নতুন জানালা খুলে দেয়, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে আরও ভালভাবে দেখতে পারি।
### উপসংহার
সুরাইয়ার গল্প আমাদের শেখায় যে জীবনের জানালা আসলে আমাদের নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আমাদের শুধু তা খুঁজে বের করতে হবে এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে হবে। সাহস, ধৈর্য এবং ভালবাসা নিয়ে যদি আমরা জীবন যাপন করি, তাহলে আমরা সবকিছু জয় করতে পারি এবং জীবনকে আরও সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলতে পারি।
এই ছিল সুরাইয়ার রূপকথার গল্প। গল্পটি হয়তো রূপকথার, কিন্তু এর মধ্যকার শিক্ষা আমাদের জীবনে সবসময় কাজে লাগবে। জীবন হলো একটি যাত্রা, যেখানে প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমাদেরকে কিছু না কিছু শিখায়। তাই আমাদের উচিত মনকে উন্মুক্ত রাখা এবং প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করা।
0 Comments